'মাগো মা ওগো মা', 'চুমকি চলেছে একা পথে', 'যদি বউ সাজো গো', 'চুপি চুপি বলো কেউ জেনে যাবে', 'চুরি করেছো আমার মনটা' - এই গানগুলো শুনলেই যেই কণ্ঠশিল্পীর নাম মনে পড়ে, তিনি আর কেউ নন, জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মো. খুরশীদ আলম। দীর্ঘ পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ব্যাপী শিল্পীজীবনে তিনি ৪২৫টিরও বেশি গান করেছেন, যেখানে রয়েছে তাঁর এমন অসংখ্য জনপ্রিয় গান।
গানের জগতে তাঁর যাত্রা শুরু আধুনিক গান দিয়ে ১৯৬৭ সালে, সেখানে তিনি প্রথমবার ‘রেডিও পাকিস্তান’ এ গান করেন। চলচ্চিত্রের জন্য প্লেব্যাকের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ ১৯৬৯ সালে ‘আগন্তুক‘ চলচ্চিত্রে 'বন্দী পাখির মত মনটা কেঁদে মরে' এই গানটি দিয়ে। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি ৭৭ বছর বয়সী বরেণ্য এই সঙ্গীতজ্ঞকে।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংগীতে অবদানের জন্য ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার একুশে পদকে ভূষিত করেন জনপ্রিয় এই শিল্পীকে। এর আগে ২০১৭ সালে '১২তম চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস'-এ আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন তিনি। ২০১৯ সালে সিটিব্যাংক (নিউইয়র্ক) কর্তৃক ‘গানে গানে গুণীজন’ সংবর্ধনায় আজীবন সম্মাননা লাভ করেন।
আধুনিক গানের এই মহারথীর জন্ম ১৯৪৬ সালের ১লা আগস্ট জয়পুরহাটের হারুনজা গ্রামে। বাবা এ. এফ. তসলিমুদ্দিন আহমেদ এবং মা মেহেরুন নেসা খানম। তাঁর শৈশব ও যৌবনের পুরোটাই কেটেছে পুরান ঢাকার নাজিরাবাজারে। নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষা জীবন শুরু করেন এই গুণী।
সংগীতে তাঁর প্রথম গুরু, চাচা ডা. আবু হায়দার সাজেদুর রহমান এবং স্কুলের সংগীত শিক্ষক শেখ আবুল ফজল। ১৯৬২ এবং ১৯৬৩ সালে মো. খুরশীদ আলম তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান এডুকেশন উইকে রবীন্দ্র সঙ্গীত এবং আধুনিক গান বিভাগে পর পর দু’বার প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি সরকারি সংগীত কলেজে ভর্তি হন এবং একই সঙ্গে ছায়ানট থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ শুরু করেন।
এই সঙ্গীতজ্ঞ ব্যক্তিগত জীবনে কুলসুম আক্তার রীনার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ১৯৭৪ সালে। তাঁদের দুই মেয়ে। বড় মেয়ে মেহরীন আলম এবং ছোট মেয়ে মিনহাজ আলম। গুণী এই শিল্পী চাকরি করেছেন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) -এ, অবসর নেন ২০০০ সালে। এখন তাঁর সারাদিন কাটে গান নিয়েই।
তাঁর দীর্ঘ প্লেব্যাক ক্যারিয়ারে আইকনিক গায়ক সৈয়দ আব্দুল হাদী, আব্দুল জব্বার, রুনা লায়লা, সুবীর নন্দী, শাম্মী আক্তার, সাবিনা ইয়াসমিন এবং অন্যান্য বিশিষ্ট গায়কদের সাথে তিনি দ্বৈত গান গেয়েছেন।
সংগীতের মহারাজ এই গায়ক এখনো গানের সঙ্গে পুরোপুরিভাবে সম্পৃক্ত। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ইন্ডাস্ট্রিতে থাকতে চান তিনি।