স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম কণ্ঠযোদ্ধা তিমির নন্দী। জন্ম ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ নভেম্বর, রাজবাড়ীতে। বাবা দেবেন্দ্রনাথ নন্দী ছিলেন রেলওয়ের কর্মকর্তা, মা রানু নন্দী।
মা গান গাইতেন ও এস্রাজ বাজাতেন, বাবা ভালবাসতেন গান। বোনরা নাচতেন। পারিবারিকভাবে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠেছেন তিনি। তিমির নন্দীর মতে, তাঁর রক্তে বয়ে চলেছে সঙ্গীতের ধারা।
যখন বয়স মাত্র সাড়ে তিন বছর, তখন থেকেই কোনো ওস্তাদ ছাড়াই তবলা বাজানো শুরু। পাঁচ বছর বয়সে নিজেই হারমোনিয়ামে সুর তোলেন তিনি। তখন থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডাক পড়ে ছোট্ট তিমিরের।
১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট পাকিস্তান মিউজিক কম্পিটিশনে আধুনিক গানে প্রথম হয়ে স্বর্ণপদক ও পল্লীগীতিতে দ্বিতীয় হয়ে রৌপ্যপদক অর্জন করেন। তারপর থেকে 'রেডিও পাকিস্তান' ও 'পাকিস্তান টেলিভিশন কর্পোরেশন'-এ নিয়মিত সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
বাবা সরকারী চাকুরী করতেন বিধায় তিমির নন্দীকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরতে হয়। সেই সূত্রে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গুণী শিল্পীর সান্নিধ্য পেয়েছিলেন।
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গান গেয়ে তিনি প্রেরণা জুগিয়েছেন মুক্তিকামী লাখো যোদ্ধাকে।
১৯৭২ সালে তিনি ওস্তাদ মুন্শী রইস উদ্দিনের কাছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তালিম নেন। পাশাপাশি নজরুল ও গণসঙ্গীতের প্রখ্যাত শিল্পী, সুরকার শেখ লুৎফর রহমান ও সুখেন চক্রবর্তীর কাছে চলতে থাকে গানের চর্চা।
তিনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে গুরু হিসেবে পেয়েছেন ওস্তাদ দুলাল কৃষ্ণ দেবনাথ, ওস্তাদ হরিপদ দাশ, ওস্তাদ আমিনুল ইসলামসহ অনেককে। পরে সুধীন দাশ, অজিত রায়, সুজেয় শ্যামসহ আরও অনেকের কাছে শেখার সুযোগ পান।
তিমির নন্দী ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন সরকারের বৃত্তি পেয়ে সংগীত নিয়ে উচ্চশিক্ষার্থে রাশিয়া চলে যান।
তিনি ইউরোপ থেকে সংগীতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করা প্রথম বাংলাদেশি শিল্পী। বাংলা ছাড়াও রাশিয়ান, স্প্যানিশ ও ইংলিশ সহ মোট ৪টি ভাষায় গান গাওয়ায় দক্ষ তিমির নন্দী।
গানে গানেই কাটে তাঁর জীবন। বর্তমানে বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে নিয়মিত সঙ্গীত পরিবেশন করছেন। তাঁর গাওয়া ‘তোমারে লেগেছে এত যে ভালো’, ‘ওগো চাঁদ কোথায় পেয়েছো এতো আলো’, ‘বাঁধন খুলে দিলাম’, ‘ঝর ঝর বারিধারা সন্ধ্যায়’, ‘এ আমার জীবন ধোয়া শ্রেষ্ঠ পরিচয়’ গানগুলো এখনো শ্রোতাদের মুখে মুখে ফেরে।
৫৪ বছরের সংগীতজীবনে বেশ কিছু একক, দ্বৈত ও যৌথ গানের ক্যাসেট ও সিডি প্রকাশিত হয়েছে তিমির নন্দীর। সঙ্গীতচর্চার পাশাপাশি শিক্ষকতা করছেন দু’টি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে।
এই বীর কণ্ঠযোদ্ধাকে “আজ গানের দিন” পরিবারের পক্ষ থেকে অভিনন্দন।